আসন্ন প্রযুক্তি বিপ্লব: বাংলাদেশ কি প্রস্তুত? যেভাবে আমরা বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিতে পারি Summary:
পরিবর্তনের হাওয়া ও আমাদের অবস্থান
মুখস্থ বিদ্যাকে না বলুন: আমাদের কারিকুলামে পরিবর্তন আসছে, এটা ভালো দিক। কিন্তু শিক্ষকদেরও আপডেট হতে হবে। বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই ‘ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং’ বা জটিল সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে হয়, তা শেখাতে হবে। কোডিং হোক নতুন ভাষা: ইংরেজির মতো কোডিং বা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানাও এখন বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। শুধু কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্রদের জন্য নয়, বরং ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এমনকি আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রদেরও ডেটা সায়েন্সের বেসিক জানা দরকার। ভোকেশনাল শিক্ষার গুরুত্ব: জাপানের বা জার্মানির দিকে তাকান। তাদের উন্নতি কিন্তু ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষার ওপর দাঁড়িয়ে। আমাদের দেশে পলিটেকনিক বা কারিগরি শিক্ষাকে ‘কম মেধাবীদের জায়গা’ ভাবা হয়—এই মানসিকতা বদলাতে হবে। রোবোটিক্স, মেকাট্রনিক্স এবং আইওটি (IoT) নিয়ে ব্যবহারিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্কিল আপগ্রেডেশন: এখন আর শুধু লোগো ডিজাইন করে টিকে থাকা যাবে না। আমাদের শিখতে হবে প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি এবং মেশিন লার্নিং। স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম: শুধু বিদেশি বায়ারের কাজ না করে, আমাদের নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য স্টার্টআপ তৈরি করতে হবে। পাঠাও, বিকাশ বা শপআপ-এর মতো আরও হাজারটা স্টার্টআপ দরকার। এর জন্য দরকার সরকারি ও বেসরকারি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সহজলভ্যতা। আমাদের তরুণদের চাকরির পেছনে না ছুটে চাকরি দাতা হওয়ার সাহস জোগাতে হবে।
প্রযুক্তির সমন্বয়: আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোকে এখনই অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে। শ্রমিকদের ছাঁটাই না করে তাদের মেশিন অপারেটর বা মেইনটেইন্যান্সের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। হাই-ভ্যালু প্রোডাক্ট: শুধু সস্তা টি-শার্ট না বানিয়ে, আমাদের এখন হাই-এন্ড বা দামী পোশাক, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল (যেমন অগ্নিনিরোধক কাপড়) তৈরির দিকে ঝুঁকতে হবে, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার বেশি।
স্মার্ট ফার্মিং: জমিতে কখন সার লাগবে, কখন পানি লাগবে—তা এখন সেন্সর দিয়ে মোবাইল অ্যাপেই দেখা সম্ভব। এতে খরচ কমবে, ফলন বাড়বে। সাপ্লাই চেইন: কৃষকের পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে অ্যাপ-ভিত্তিক সাপ্লাই চেইন তৈরি করতে হবে, যাতে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা লুটে নিতে না পারে। ‘আইফার্মার’ (iFarmer) এর মতো উদ্যোগগুলো এখানে আশা জাগাচ্ছে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট: প্রযুক্তির বিপ্লবের প্রধান শর্ত হলো হাই-স্পিড ইন্টারনেট এবং স্টেবল ইলেকট্রিসিটি। সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ বাড়াতে হবে এবং গ্রামে-গঞ্জে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করতে হবে। ডেটা সেন্টার: আমাদের নিজস্ব ডেটা সেন্টার বা ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করতে হবে। বিদেশি সার্ভারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই জরুরি।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তৈরি: আমাদের দেশে দক্ষ সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টের অভাব প্রকট। সরকারিভাবে হ্যাকাথন আয়োজন এবং এথিক্যাল হ্যাকিং শেখার সুযোগ করে দিতে হবে। সচেতনতা: সাধারণ মানুষকে ফিশিং, ম্যালওয়্যার এবং ওটিপি (OTP) জালিয়াতি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল লিটারেসি ক্যাম্পেইন চালানো দরকার।
রেড টেপিজম বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা: উদ্যোক্তারা ট্রেড লাইসেন্স বা লোন পেতে গিয়ে জুতো ক্ষয় করে ফেলেন। এই প্রসেসগুলো সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও অটোমেটেড হতে হবে। ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়া: সিলিকন ভ্যালিতে ব্যর্থতাকে অভিজ্ঞতার অংশ ধরা হয়। আমাদের দেশে স্টার্টআপ ফেল করলে তাকে ‘অপদার্থ’ বলা হয়। এই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *




.webp)
 (1080 x 1080 px).webp)
.webp)
.webp)
.webp)